পিতা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য থেকে পুত্র আজ নগরের একটি নাম

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে সর্ব প্রথম একত্রে সংগঠিত করার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার নেতা কর্মীদের সারা দেশে জেলা উপজেলা ভিত্তিক কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন এবং তার ঘনিষ্ঠ সহচরদের কমিটি তত্ত্বাবধানে দিয়ে দেশের বিভিন্ন অংশে দায়িত্ব ভাগ করে দেন।  সে সময় কিশোরগঞ্জ জেলার তত্ত্বাবধানে ছিলেন বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রয়াত জিল্লুর রহমান। কিশোরগঞ্জ জেলার অন্তর্গত ভৈরব উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রথম কমিটি গঠন করা হলে প্রতিষ্ঠাতা সদস্য পদ পান ভৈরব উপজেলার প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা প্রয়াত আব্দুস সাদেক। ১৯৭৫ সালের আগস্ট মাসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তার স্বপরিবারে হত্যার পর ১৯৭৬ সালে ভৈরব উপজেলা আওয়ামী লীগ কর্তৃক সর্ব প্রথম তার মৃত্যু বার্ষিকী পালন করতে গেলে গ্রেফতার হতে হয় জিল্লুর রহমান সহ ভৈরব উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতাদের যাদের মধ্যে একজন ছিলেন সেই প্রতিষ্ঠাতা সদস্য আব্দুস সাদেক। রাজনৈতিক নানা সংবিগ্নতার কারণে পরবর্তী সময়ে আব্দুস সাদেক তার বড় পুত্রকে সেখান থেকে ঢাকায় চলে যেতে বলেন।
নিজ বাবার এমন উদ্বিগ্ন পরিস্থিতির স্বীকার হতে দেখে ঢাকায় এসে সিদ্ধান্ত নেন এর পরিবর্তন ঘটানোর। সেই লক্ষ্যে ঢাকার মিরপুর এলাকায় ছাত্র রাজনীতির সাথে দৌড় ঝাপ করতে শুরু করেন। ছাত্রলীগের দীর্ঘদিন কমিটি না হওয়ায় দৌড় ঝাপ করেও তেমন সুবিধা করতে না পেরে যোগ দেন ওয়ার্ড যুবলীগে।
১৯৮০ সালের পর কর্মী থেকে ওয়ার্ড যুবলীগের সহ-সভাপতি হয়ে মাঠের রাজনীতিতে সক্রিয় হন তিনি। ৯০ এর স্বৈরাচারী সরকার পতন আন্দোলনে রাজধানী ঢাকার মিরপুর এলাকায় তার সরব কর্মকান্ডের মধ্য দিয়ে যুবলীগের লাইমলাইটে আসেন এবং অবিভক্ত ঢাকা মহানগর যুবলীগের সদস্য হন। তার সরকার বিরোধী নানা কর্মকান্ডের দায়ে সে সময় মিরপুর থেকে তার বাড়ি ঘেড়াও করে আটক করা হয় এবং দীর্ঘদিন ডিটেনশন দিয়ে জেলহাজতে রাখা হয়। পরিশেষে আইনী প্রক্রিয়ায় তিনি মুক্তি পান। পরবর্তী সময়ে যুবলীগ কর্তৃক পথ সভা, মিছিল সহ নির্বাচনী নানা কাজে ভূমিকা রাখেন। যুবলীগের পাশাপাশী ১৯৯৬ সালের জাতীয় নির্বাচনে সে সময়ের আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথেও নির্বাচনী নানা কাজে অংশ নেন এবং এক পর্যায়ে আবারো স্পট গ্রেফতার হন। এবং তখন থেকেই তিনি যুবলীগের হয়ে আন্দোলনকারীদের মধ্যে প্রথম সারিতে চলে আসেন। যুবলীগের কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হলে তাকে অবিভক্ত ঢাকা মহানগর যুবলীগের সহ সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়। ৯৬ এ শেখ হাসিনা প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে তিনি যুবলীগ নেতাকর্মী নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সাথে গাছ লাগানো, গরীবদের খাবার বিতরন সহ নানা সামাজিক কার্যক্রমে উপস্থিত থেকে নিজের অবস্থান জানান দেন।
২০০২ সালে যুবলীগের ৫ম কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হলে তিনি ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের সিনিয়র যুগ্ন-সাধারণ সম্পাদক হন। যুবলীগের এক সমাবেশে খালেদা জিয়াকে সরাসরি চেল্যাঞ্জ করে জালাময়ী বক্তব্য দেন যার জন্য সে দিন রাতেই মিরপুরের ধ-ব্লক এলাকায় ডজন খানেক সন্ত্রাসী তার মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে হত্যার হুমকি দেয় এবং নিজ বাড়ি থেকে বের করে নিয়ে যায়। মাস খানেক পর পরিস্থিতি ঠান্ডা হলে তাকে ছাড়া হয়।
বিএনপি জোট সরকারের আমলে একদিনে তিন মামলা ছাড়াও একাধিকবার মামলা-হামলার শিকার হতে হয় তাকে। বিশেষ করে ১/১১ এর সময় শেখ হাসিনা মুক্তি আন্দোলনের কারণে জরুরী বিধিমালায় মামলার আসামি করে তাকে দীর্ঘদিন কারাগারে বন্দি করে রাখা হয়। সে সময়কার ঢাকার রাজনীতির মাঠে সর্বক্ষেত্রে তার ব্যাপক সক্রিয়তার কারণে তাকে পরবর্তিতে একাধিকবার আটক করে অসম্ভব অত্যাচার করা হয়। তত্তাবধায়ক সরকারের আমলে ঢাকার সংসদীয় ৩টি আসন বিশিষ্ট বৃহত্তর মিরপুর এলাকায় তখন মরণ ভয়ে কেউ নিজ বাড়ি থেকে বের হওয়ার সাহস না দেখালেও তিনি সর্বপ্রথম মিরপুরে জীবনের তোয়াক্কা না করে প্রকাশ্যে বেরিয়ে আন্দোলনের ডাক দিয়ে হামলার কবলে পরেন ও গ্রেপ্তার হন। এটি অনেকের মনে সাহস যোগায় এবং পরবর্তীতে গণজোয়ারে পরিণত হয়। দুঃসময়ে তার এই অকুতোভয় নেতৃত্বের জন্য আজ রাজধানীর মিরপুর এলাকার স্থানীয় পর্যায়ে সবার মাঝে তিনি ব্যাপক জনপ্রিয়।
অবশেষে ২০১২ যুবলীগের ৬ষ্ঠ কংগ্রেসের মধ্য দিয়ে তিনি ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদকের পদে আসীন হন। বীগত ১২ বছরে বিএনপি সারা দেশে পেট্রোল বোমা ও নানা ভাবে হামলা করে অনেকাংশে সফল হলেও ঢাকায় কোনো কিছু করতে সক্ষম হয়নি। এর পেছনে এই যুবনেতার ব্যাপক সাংগঠনিক ভূমিকা রয়েছে যা স্বীকার করেছে আওয়ামী লীগের সে সময়ের অনেক নীতি নির্ধারকগণ। বর্তমানে তার নেতৃত্বে ঢাকার একাংশ জুরে রয়েছে শক্তিশালী লোকবল যার জন্য যেকোনো মিছিল-সমাবেশে সরাসরি এই যুবনেতাকে তৎপর হওয়ার নির্দেশ দেয় আওয়ামী লীগ হাই-কমান্ড।
কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব উপজেলার প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা মরহুম আব্দুস সাদেকের সেই সন্তান মোঃ ইসমাইল হোসেন।
বর্তমানে অবসর প্রাপ্ত ভৈরব উপজেলা আওয়ামী লীগের এক বর্ষীয়ান নেতা জানান, উনাকে তখন আমি চাচা বলে ডাকতাম। আব্দুস সাদেক চাচাকে দেখেছি সেই সময়ে যখন প্রথম আওয়ামী লীগের কমিটি গঠন করা হয় তখন তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগে সদস্য পদ পান। জেলেও যেতে দেখেছি। এসব কিছুর সাক্ষী জিল্লুর রহমান ও তার পরিবার। আমাদের নেতা জিল্লুর রহমানের সাথেও পারিবারিক মেলবন্ধন ছিল তার। তবে চাচার ছেলে ইসমাইল নিজের চেষ্টায় ঢাকায় এত বড় নেতা হয়ে যাবে তা আমরাদের জন্য গর্বের।
তিনি আরও বলেন, জিল্লুর রহমান সাহেব তখন রাষ্ট্রপতি। ইসমাইল হঠাৎ বঙ্গভবনে আসে। আমি তখন সেখানে উপস্থিত ছিলাম। জিল্লুর ভাই ইসমাইলকে ঢাকা মহানগরের সেক্রেটারী হতে দেখে খুশিতে আপ্লুত হয়ে পরেন এবং নিজ দায়িত্ব সঠিকভাবে পালনের জন্য দিক নির্দেশনাও দেন। আমি দোঁয়া করি সে যেন আরও উচ্চতায় এগিয়ে যায়।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর